আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী

alorsangbad com
1. ৮ অক্টোবর, ২০২০ / ৮৪ বার পঠিত

আলোর সংবাদ ডেক্স: রংপুরের বদরগঞ্জের আদিবাসী রুখিয়া রাউৎকে (২৩) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বদরগঞ্জ উপজেলা শহীদ মিনার এলাকায় মানববন্ধন সমাবেশ করেছে এলাকাবাসীরা।

বক্তারা বলেন, সারাদেশে নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেই চলেছে। জনবল, অবকাঠামো, আধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরও ধর্ষকদের গ্রেফতার করতে পারছে না দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যারাও গ্রেফতার হচ্ছে তারা আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। নারীরা সম্ভ্রম হারিয়ে সমাজে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হচ্ছে। অনেকে অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করছে। এ সময় রাষ্ট্রের প্রতি সকল নারীর নিরাপত্তার দাবী জানান তারা।

জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মিশনপাড়ার ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠির দিনেশ রাউৎ এর মেয়ে রুখিয়া রাউৎ রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষে পড়তো। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রংপুরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন রুখিয়া।

বান্ধবীদের সঙ্গে একরাত থেকে পরের দিন তার ফিরে আসার কথা ছিল। শেষবার ফোনে মা সুমতিকে সে বলে যায় ‘মা রংপুর যাচ্ছি। চিন্তা করিস না। সকালে আবার ফিরে আসবো।’ এরপর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ওইদিন সে আর বাড়িতে ফিরে না আসলে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের লোকজন।

অবশেষে পরের দিন মঙ্গলবার ভোরের দিকে বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ঘুনুরঘাট এলাকার পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়ার শালবাগান থেকে অজ্ঞাত একটি লাশটি উদ্ধার করে মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি।

উদ্ধারের সময় নিজের ওড়না দিয়ে তার হাত-পা গলায় সঙ্গে বাধা ছিল। পরনে ছিল সালোয়ার কামিজ। মুখের দাঁতগুলো ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত ও ক্ষত-বিক্ষত ছিল মুখ। দুর্বৃত্তরা নির্দয়ভাবে হত্যার পর অটোচালিত গাড়ীতে করে সেখানে লাশটি ফেলে যায়। পরে মধ্যপাড়া পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

এদিকে লাশের পরিচয় জানতে ওইদিন সন্ধ্যায় দিনাজপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি তদন্ত দল মৃতের হাতের আঙ্গুলের ছাপ নেয়। এতে তারা জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে চেহারার ছবি মিলে যাওয়ায় জানতে পারেন সে বদরগঞ্জের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি পরিবারের মেয়ে।

রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউৎ বলেন, একই এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে আনিছুল প্রায় সময় রুখিয়াকে ত্যক্ত-বিরক্ত করতো। হোস্টেল থেকে বাড়িতে আসলে সে নানাভাবে বিরক্ত করতো আমার মেয়েকে। এক পর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়।

গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ (৫ অক্টোবর) আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।

গত সোমবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে রুখিয়া তার ডায়েরিতে লিখে গেছে ‘আত্মহত্যা করতে গিয়ে কোনোভাবে বেঁচে গেলাম। আজ (৫ অক্টোবর) আমাকে আনিছুল দূরে কোথাও ডেকেছে। যেখানে ও নিজের হাতে আমাকে হত্যা করবে। আমার সবকিছুর জন্য আনিছুল দায়ী।’ বাড়ি থেকে যাওয়ার কোন এক সময় রুখিয়া ডায়েরিতে এসব লিখে রাখে। পড়ার টেবিল থেকে রুখিয়ার ডায়েরি উদ্ধার করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আনিছুল হক, অটোচালক রাজ মিয়া ও আশিকুজ্জামানকে বুধবার ভোরে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

বদরগঞ্জ উপজেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সমাজ উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শ্যামল টুডু বলেন, ‘অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি চাই। তা না হলে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম জানান, নির্দয়ভাবে মেয়েটিকে হত্যার পর লাশ ফেলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেভাজন আনিছুল নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এতে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানতে তদন্ত চলছে। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে লাশের ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন: