শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: শুনুন এক ঠিকাদার ভাইয়ের কাণ্ড। তাঁর নাম রাকিব মিয়া; রাকিব ব্রাদার্সের সত্ত্বাধিকারী। তিনি কাজ করেন ঠিকাদার হিসেবে। ঠিকাদারীর এক পর্যায়ে একটা মজার ব্যাপার ঘটে গেল। বটেরহাট সুইচ গেট নামক স্থানে ২৫টি পিলার, ৩০ হাজার ইট, ০৩ টন রড লুটপাট করে নিয়ে লা-পাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। বিষয়টা নতুন কিছু নয়, কমবেশি সবাইকেই জীবনে এমন মানুষের পাল্লায় পড়তে হয়েছে। ইংরেজিতে এই ধরনের মানুষের জন্য রয়েছে একটি মজার শব্দ- ‘ফ্রেনেমি’। অর্থাৎ এমন এক ‘ফ্রেন্ড’, যে কি না আদতে ‘এনিমি’। এ যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ। আসলে বিষয়টি জানেন? রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সমাজের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়, সৃষ্টি হয় অরাজকতা, তৈরি হয় বিচারহীনতার এক পশু সমাজ। যেখানে দেদারসে চলে অনৈতিক কাজ, চলে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার ভয়ঙ্কর এক প্রতিযোগিতা। রংপুরের পীরগঞ্জে মৎস্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাধ ভেঙ্গে ইট ও রড লুটপাট করার এমন একটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত ঘটনায় নদী খনন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন মৎস্যজীবিরা। জানা গেছে, উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বটেরহাট সুইচ গেট সংলগ্ন উজানের বড় বিলার পানির ধারণ ক্ষমতা দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা ও কৃষি জমিতে পানি সেচের জন্য প্রায় দেড় যুগ আগে মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ৩’শ ৫৮ জন সদস্যদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা মৎস্য বিভাগ প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এ বাঁধটি নির্মাণ করেছিলেন। সম্প্রতি নদীর উপরিভাগ খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ট্রেন্ডার দেয়। ট্রেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি পান রাকিব ব্রাদার্স, প্রোঃ রাকিব মিয়া, রংপুর। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকার উপরে। উক্ত ঠিকাদার রায়পুর ইউনিয়নের নিজামপুর থেকে রামনাথপুর ইউনিয়নের কালীতলা ব্রীজ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার নদী খনের কাজ শুরু হলে বটেরহাট সুইচ গেট নামক স্থানে ২৫টি পিলার, ৩০ হাজার ইট, ৩ টন রড লুটপাট করে নিয়ে গেছে ঠিকাদারের লোকজন। এদিকে সমিতির সভাপতি বিপুল চন্দ্র ও হাজারো কৃষক বাধা প্রদান করলে খনের কাজ থমকে যায়। সুবিধাভোগী সদস্য বড় করিমপুর গ্রামের সুভাস চন্দ্র, সত্য, বিপুল, রাজারামপুর গ্রামের কৃষক রাজা মিয়া, বাবলু মিয়া জানান গায়ের জোরে ঠিকাদার উক্ত বাধটি ভেঙ্গে দেন। আমরা শত চেষ্টা করেও বাঁধটি রক্ষা করতে পারিনি। পুনরায় বাঁধটি নির্মাণ না করা হলে উজানের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান খরা এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকবে না। আমরা এই বাঁধ ভাঙ্গার বিচার চাই। এদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অনিয়মের মধ্য দিয়ে যেনতেন ভাবে নদীটি খনন করা হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। অভিযোগকারী বিপুল চন্দ্র সরকার জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। কৃষকরা যাতে পানি পায়, সেজন্য মৎস্যজীবির সাথে কথা বলেছি, তবে ঠিকাদারের লোকজন বাধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল বাধ নির্মাণ করার কোন ব্যবস্থা নেয়নি ঠিকাদার। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারী রাসেল মাহমুদ জানান, ঠিকাদার না বুঝে বাধটি ভেঙ্গে ফেলেছে তবে রিপারিং করে দিবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ঠিকাদার এবং মৎস্যজীবি লোকদের সাথে আলোচনা হয়েছে। দ্রæত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা হবে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বরুন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বিষয়টি জেনেছি তারা মেরামত ও ক্ষতিপূরণ দিবেন।