শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার: রাজশাহীর কাটাখালি থানার ঘোড়ামারা নামকস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত ১৭ জনের বাড়িই রংপুরের পীরগঞ্জে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নিহতদের পরিবারসহ ৫ গ্রামে চলছে শোকের মাতম। গ্রাম গুলো হচ্ছে- রায়পুর ইউনিয়নের দ্বারিকাপাড়া, রামনাথপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর, বড় মজিদপুর, পীরগঞ্জ পৌরসভার প্রজাপাড়া এবং মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের বাসিন্দা। কয়েকটি পরিবারে আহাজারি করারও কেউ নেই। শোকে স্তব্ধ গ্রামবাসী রয়েছেন লাশের অপেক্ষায়। নিহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে (২৬ মার্চ) উপজেলা সদরের রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর কালো রংয়ের হাই-এইস মাইক্রোবাস নিয়ে পীরগঞ্জের কয়েকটি পরিবারের ১৭ জন সদস্য রাজশাহীতে বেড়ানোর উদ্যেশ্যে রওনা দেন। মাইক্রোবাসটি জুমার নামাজের পর রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে সড়কের ডান পাশ দিয়ে চলতে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাস সামনে থেকে ধাক্কা দেয়। এতে ওই মাইক্রোতে থাকা ১৭জন যাত্রীই মারা যান। শুধু প্রাণে বেঁচে যান চালক হানিফ মিয়া। তবে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পীরগঞ্জের দ্বারিকাপাড়া গ্রামের মৃত: আফছার আলী ছেলে মোকলেছার রহমান (৪০), তার সহধর্মীনি পারভীন বেগম (৩৫), কলেজ পড়–য়া ছেলে পাভেল রহমান (১৭), রাজারামপুর গ্রামে বসবাসকারী হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী ছালা উদ্দিন (৪২) তার স্ত্রী শামছুন নাহার (৩২), তাদের দুই সন্তান সাজিদ (০৯), আফিয়া খাতুন সাফা (০৩) এবং শালিকা কামরুন্নহার বেগম (৩৮), পার্শ্ববতী বড় মজিদপুর গ্রামের মৃত: জোনাব আলী ছেলে ফুল মিয়া (৩৫), স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০), তাদের ৩ সন্তান ফয়সাল (১৩), সুমাইয়া (০৬) ও সাবিনা (০৩), পীরগঞ্জ পৌরসভাস্থ প্রজাপাড়া গ্রামের মৃত: শামছুল ইসলামের ছেলে ভুট্টু (৫০) তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪২), একমাত্র ছেলে ইয়ামিম (১৩), এবং মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে সাইদুল ইসলাম (৪৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এদিকে মাইক্রোবাস চালক পীরগঞ্জ থানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পচা মিয়া বেচে আছেন না মারা গেছেন অনিশ্চিত বলে পুলিশ জানায় এবং সালাউদ্দিনের পরিবারের সকল সদস্যই নিহত হওয়ায় পরিবারের আর কেউই আহাজারি করার জন্য বেঁচে নেই। নিহত পরিবারের কর্তারা সবাই কর্মক্ষম এবং ব্যবসায়ী। নিহত পরিবারগুলোর মধ্যে ফুল মিয়ার বৃদ্ধা মা ফইমনন্নেছা এবং মোকলেছারের একমাত্র মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মোহনা বাড়িতে থাকায় বেঁচে গেছেন। বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে মোহনা এখন বাকরুদ্ধ। শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মানুষদেরকে দেখছেন। কান্নাও ভুলে গেছে মোহনা। চৈত্রকোল ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি গ্রামের বাসিন্দা হবিবর রহমান বলেন, সালাউদ্দিন বিয়ের পর থেকে তার শ্বশুর বাড়ি রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে থাকতেন। দুর্ঘটনায় তার পরিবারের সবার মত্যৃর সংবাদে গ্রামজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়েছে। রায়পুর ইউনিয়নের দ্বাড়িকাপাড়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিন বলেন, এক দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের মৃত্যু এর আগে এখানে কখনো হয়নি। এই শোক সহ্য করা খুব কষ্টের। শুনেছি আগুনে পুড়ে গেছে তাদের লাশ। তবুও শেষ বারের মত দেখার জন্য অপেক্ষা করছি। রামনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বিএসসি বলেন, এতগুলো লাশের শোক আমি কী বলে শান্তনা দিবো। শোক জানানোর ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। পীরগঞ্জ থানার ওসি সরেস চন্দ্র বলেন, ড্রাইভার হানিফকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের লাশ দ্রæত পীরগঞ্জে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। রাজশাহীর কাটাখালি থানার সিসি টিভির ভিডিও দৃশ্যে দেখা যায়, পীরগঞ্জের মাইক্রোবাসটি সড়কের ডান পাশ (ভুল পথে) চলছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রæতগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস মাইক্রোবাসটিকে ধাক্কা দেয়। এতে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে আগুন ধরে যায়। এসময় পাশে থাকা একটি লেগুনাতেও আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থল থেকে ছয়জনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। পরে মাইক্রোবাস থেকে আরও ১১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। শুধুমাত্র মাইক্রোচালক হানিফ মিয়া প্রাণে বেঁচে যান।