রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১০ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরের পীরগঞ্জে চতরা ইউনিয়নের নীল দরিয়া নীলাম্বর রাজার রাজধানী পর্যটন কেন্দ্র ২০২১ সালে চালু হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক নীলদরিয়া পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩ ল টাকার বরাদ্দ দেয় কর্তৃপ। জানা গেছে, ১২শ শতাব্দির মাঝা-মাঝি উত্তর জনপদে এক সময় প্রবল পরাক্রান্ত রাজাগণ ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। তাদের বংশের শেষ রাজা নীলাম্বর দেব। নীলাম্বদের অনেক রাজধানী ছিল। সেগুলোর মধ্যে উন্নতম পীরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দেিণ চতরা নীলদরিয়া পরিচিত একটি এলাকায়। বর্তমানে জাতীয় সংসদের স্পীকার পীরগঞ্জ আসনের এমপি ড. শিরীন শামিন চৌধুরী গত বছরে ৩০ জুলাই/১৯ আনুষ্ঠানিক ভাবে নীল দরিয়া পর্যটন আকর্ষন কেন্দ্র উন্নয়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ১২’শ শতাব্দিতে বাংলায় যখন হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতাব ছিল তখন পাক ভারতের রাজধানী ছিল গৌড়ে। লণ সেন ছিল গৌড়ের রাজা। তারই অধীনে ছিলেন পীরগঞ্জের কিংবন্দীর রাজা নীলাম্বর দেব। তিনি গৌড়ের রাজা লণসেনকে কর দিতেন। সে যুগে হিন্দু রাজা-বাদশারা প্রজাদের উপর নিয়মিত কর তুলতেন। কর দিতে না পারায় প্রজাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন চলতো। দিনের পর দিন যখন হিন্দু রাজাদের অত্যাচার মাত্রা বেড়েই চলছে। তখনই ১৭ জন পীর আউলিয়া আর্বিভাব হয় পাক ভারতে। এই আউলিয়াগণ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে ইসলাম ধর্মের কথা প্রচার করে থাকেন। লোকজন তাদের সাথে সহজে মিশতে এবং কথা বলতে পারায় ইসলাম ধর্মের দিকে মানুষ ধাবিত হয়। এ খবর গৌড়ে রাজা জানতে পেরে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। সে সময় যুদ্ধ হতো তীর ধনুক দিয়ে। সেই যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে গৌড়ে রাজা পরাজিত হন এবং গৌড় মুসলমানদের দখলে আসে। ১৭জন আউলিয়ার মাঝে শাহ ইসমাইল গাজী (রাঃ) অন্যতম বলে জানা যায়। তিনি বড়দরগায় আস্থানা স্থাপন করেন। সেখান থেকেই কর আদায়ের জন্য লোক পাঠান হিন্দু রাজা নীলাম্বর দেবের কাছে তার রাজধানী চতরায়। কিন্তু নীলাম্বর মুসলমানদের কর দিতে অস্বীকার করায়। শাহ্ ইসমাইল গাজী (রাঃ) নীলাম্বর রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। শত্র“ পরে হাত থেকে রা পাবার জন্য রাজা নীলাম্বর রাজধানীর ৫৬ একর জমির চতুরপার্শ্বে ৮০ হাত প্রস্থ এবং ৮০ হাত গভীর একটি পুকুর খনন করেন। তারই পরিখার মাটি দিয়ে রাজধানীকে সুরতি করার জন্য চারপার্শ্বে উচু করে ১৪ হাত প্রস্থের ইটের প্রাচীর নির্মাণ করেন। প্রাচীরের দেিণ রাখা একটি মাত্র সদর দরজা। এই দরজা বন্ধ করা হলে রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ করার কোন সুযোগ ছিল না। রাজধানীর সুরার কাজ শেষ করে নীলাম্বরের সৈন্যরা রাজধানী থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দুরে এসে অসংখ্য বেড় গড় তৈরী করেন। সেই গড়ে হাতি পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে পারতো। এখনও সেই স্বাী হিসেবে গড় গুলো বিদ্যমান। জলধার বেষ্টিত মাঝের উচু স্থানে কয়েক’শ গাছের চারা রোপন করে বনবিভাগ তাদের দায়িত্ব সেরেছে। ১২৬০ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে রাজধানীর চারপাশে খননকৃত পরীার উত্তর পূর্ব কোন ভরাট হয়ে যায়। অবশিষ্ট এলাকা এখনও গভীর নীল জলাধার। যে কারণে এলাকাবাসী এটির নাম করণ করেছে নীল দরিয়া। এ ব্যাপারে চতরা ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক শাহিন জানান, মানুষের মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মনের খোরাক ছুটির দিনে আশে পাশের লোকজন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে উপভোগ করতে পারবে। এক দিকে যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে কেন্দ্র স্থাপন হতে যাচ্ছে এবং সরকারের প্রতি বছর রাজস্ব আয় বাড়বে ও অনেক বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগসহ ৭০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই উদ্বোধন হবে।