বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭ অপরাহ্ন
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ রংপুরের পীরগঞ্জে ত্রাণ দপ্তরের রাস্তার কাজে কৃষকের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকানুপুর গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ঘটনার পর রাতেই কৃষকেরা জমির মাটি রক্ষায় জরুরী বৈঠক করেছে। শনিবার ওই রাস্তায় কাজ বন্ধ ছিল। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে দেশের বন্যা কবলিত ১৯ টি জেলায় রাস্তা পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে পীরগঞ্জেও ২ টি প্যাকেজে ৪ টি ইউনিয়নের রাস্তায় মাটির কাজ, এইচবিবি ও প্যানাসাইডিং করার জন্য ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল বিল্ডার্স এন্ড কনস্ট্রাকশন লিঃ কাজটির কার্যাদেশ পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার টুকুরিয়া ও বড়আলমপুর এবং টুকুরিয়া ও কাবিলপুর ইউনিয়নে ৪ টি রাস্তার কাজ করবে। টুকুরিয়া ও বড় আলমপুর ইউনিয়নের প্যাকেজের রাস্তার (আইডি নং ৬৭৭৩৬৯) প্রায় ৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তায় কাজ করা হবে। রাস্তা দুটি হলো, বড়আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুরিয়া শালপাড়া নয়া মিয়া মুন্সির বাজার হতে ধর্মদাসপুর বৈশাখী বাজার ভায়া মছির উদ্দিন চেয়ারম্যান ও মাহফুজার রহমানের বাড়ী পর্যন্ত এবং টুকুরিয়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর হারেছের বাড়ী হতে জয়ন্তীপুর ঘাট ভায়া রামকানুপুর পর্যন্ত। অপরদিকে চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের প্যাকেজে রাস্তার (আইডি নং ৬৭৭৩৯৭) প্রায় ৪ কোটি ৫২ লক্ষ টাকায় পৌনে ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ওই কাজ করা হবে। রাস্তা দুটি হলো কাবিলপুর ইউনিয়নের হলদিবাড়ি পাকারোড হতে মানাসি ফরিদপুর ঘাট পর্যন্ত এবং চতরা ইউনিয়নের গিলাবাড়ী পাকারোড হতে ক্লাস শেল্টার পর্যন্ত ভায়া হয়ালস্ হাউস। এই দুটি প্যাকেজের রাস্তায় মাটির কাজের জন্য দেড় কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে বড় আলমপুর ও টুকুরিয়া ইউনিয়নের ওই রাস্তায় প্রায় ৮৭ লক্ষ টাকার মাটি ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া আছে। ওই প্রকল্পের রাস্তাগুলো নির্মাণে কৃষকের জমি থেকে মাটি কেটে নেয়া হলে মাটির মুল্য পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য প্রকল্পে প্রায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দও রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পীরগঞ্জের স্থানীয় প্রভাবশালীদেরকে দিয়ে কৃষকদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা না দিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে কৃষকরা বাঁধা দিলে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকানুপুর গ্রামের কৃষকেরা তাদের জমি রক্ষায় ঠিকাদারের স্ক্যাবাডার (মাটি খনন যন্ত্র) চালককে বাঁধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলে গ্রামবাসী রাস্তার কাজ আটকে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা নাম না প্রকাশ করে বলেন, আমরা শুনেছি, রাস্তায় মাটি ক্রয় করে দেয়ার কথা। আমরা আমাদের জমি থেকে মাটি কাটায় বাঁধা দিলে মামলার হুমকি দিয়ে ঠিকাদারের লোকজন জমির মাটি কেটে জমিতে গর্ত করেছে। এখন এই গর্তগুলো কিভাবে পুরন করবো। তাই মাটির মুল্য না দিলে আর জমি কাটতে দিবো না। আমরা এ ব্যাপারে গ্রামের লোকজন শুক্রবার রাতে গ্রামে জরুরি মিটিং করেছি। বড় আলমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এর আগে আমার ইউনিয়নের লোকজনকে হুমকি দিয়ে ঠিকাদারের স্থানীয় কয়েকজন জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়েছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদেরকে ক্ষতিপুরনের জন্য দাবী করছি। উপজেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, মাটি তো জমির পাশ থেকেই কাটতে হবে। মানুষ মাটি না দিলে কাজ হবে না। প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) যুগ্ম সচিব সুব্রত পাল চৌধুরী বলেন, পীরগঞ্জে জাইকা প্রকল্পের অধীনে ওই রাস্তাগুলোতে মাটি দেয়ার জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। ঠিকাদার যদি টাকা না দেয়। তাহলে কৃষকরা যেন আমার সাথে কথা বলে। তিনি আরও বলেন, রাস্তার টো থেকে ৫ ফুট দুরের মাটি নেয়া যাবে। অবশ্যই জমির মালিকদের সাথে নিগোশিয়েট করতে হবে। যদি কৃষক তার জমি থেকে মাটি নিতে না দেয়, সেক্ষেত্রে মাটি অন্য স্থান থেকে পরিবহন করে আনতে হবে। এ জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া আছে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ওই রাস্তাগুলোর কাজ এবং মাটি কাটা নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে গত বছরের ১৭ জুন প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) সুব্রত পাল চৌধুরী, ডিপিডি উপসচিব মোস্তাফিজার রহমানসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা পীরগঞ্জে এসে কাজ পরিদর্শন করেন। প্রকল্পটির ডিপিডি’র বাড়ী পীরগঞ্জে হওয়ায় তিনি কাজটির সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।