শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার : কত সাজগোজ! সুন্দর কাপড়, আয়নায় নিজকে বার বার দেখা স্টুডিও এমন দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। ছবি কিংবা ভিডিও দুটি এখন করছে হাতের মোবাইল ফোন। এখন হাটা-চলা আচার অনুষ্ঠান ভিডিও লাইফ সব ধারণ করা হয় মোবাইল ফোন ও সেলফিতে। আর এভাবেই হারিয়ে গেছে এক সময়ের স্টুডিও গুলো। নিজ হাতেই যখন স্টুডিও তখন আর কে যায় দুরের আনুষ্ঠানিক স্টুডিওতে। তাইতো রিক্সায় কিংবা রাস্তায় ঘরে বারান্দায় অথবা ছাদে বিপণী বিতান পাবলিক বাস, বিয়ে-সাদি, জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী কোন কিছুই বাদ যায়না সেলফিতে। প্রযুক্তির এই যুগে প্রত্যেকের হাতে স্মার্ট ফোন মানেই এক একটি ডিএসএলার ক্যামেরা। এ দলে যোগ দিয়েছেন শুধু তরুণ-তরুনীরাই নয় সব বয়সের মানুষ। আবার কেউ কেউ বিশাল লেন্সের ডিজিটাল ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে এখনকার জেনারেশন। হাজার হাজার ছবি তুলছে তারা, তাদের প্রয়োজন পড়ছে না স্টুডিও বা ল্যাবে যাওয়ার। রংপুরের পীরগঞ্জে সেলফি যুগ আসায় স্টুডিও ব্যবসায়ীদের স্টুুডিও ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যবসা করতে দেখা গেছে। পীরগঞ্জে ৯টি স্টুডিও বিলাসী স্টুডিও, বলাকা স্টুডিও, আখিরা স্টুডিও, বিপাশা স্টুডিও, নানা ভাই, দেশ স্টুডিও, রাজ স্টুডিও, শৈশব স্টুডিও, মা স্টুডিও রয়েছে। এর মধ্যে ২-৩টি স্টুডিও থাকায় ওই ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসা করছেন। দেশ স্টুডিও বাদল মিয়া জানান, ১০-১২ বছর আগে স্টুডিও ব্যবসা অতি রমরমা ছিল। স্টুডিওতে রাখা হত ইয়াসিকাসহ অন্যান্য ক্যামেরা। আর ব্যবহার করা হত ফিল্ম। ছবি ডেলিভারি দেওয়া হতো সাদাকালো। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীদের বেশ ভীড় থাকতো। ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও বেশ কাজের অর্ডার পাওয়া যেত। বিভিন্ন সমিতি ও এনজিওর কর্মকর্তারা পুরো মাসেই ছবির কাজ করে নিত। মাস শেষ হলেও তাদের কাছে পাওয়া যেত মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া ক্যামেরা ভাড়া নিয়ে যেত অনেকেই বিশেষ করে পিকনিকে যারা যেত তারাই ক্যামেরা বেশি ভাড়া নিত। প্রায় স্টুডিও মালিক সপ্তাহে ২/৩ দিন বিয়ে বাড়ি এবং জন্ম দিনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে অর্ডার পেত। বর্তমানে এসবের কিছু কিছু বিষয় শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। অপর এক স্টুডিও মালিক বলেন, স্টুডির ব্যবসা করে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক স্টুডিও’র মালিক দোকান ভাড়া দিয়ে কোন মতে তাদের ব্যবসা টিকে রেখেছেন। ব্যবসায় মন্দাভাবের জন্য ওই স্টুডিও মালিক সেলফি যুগকে দায়ী করেন। তিনি আরও বলেন, এখন হাতে হাতে রয়েছে মোবাইল, যখন ইচ্ছা ছবি তুলে তারা ল্যাবে ছুটেন। পাশাপাশি ডিজিটাল ক্যামেরাও ভুরি-ভুরি। প্রায় মানুষের হাতেই এই ক্যামেরা রয়েছে। যার কারণে পীরগঞ্জ সদরের কম্পিউটার দোকান গুলোতে মিনি স্টুডিও গড়ে উঠেছে। এদিকে সদরে ৫০-৬০টি কম্পিউটারের দোকান হওয়ায় গ্রাহকরা অনেকেই ল্যাবের উপর নির্ভরশীল।