শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে : রংপুরের পীরগঞ্জে অনুমোদন বিহীন ৫৩টি ইট ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন অসংখ্য দুর্বার ট্রাক। তিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীন কাঁচা-পাকা রাস্তা, চাকায় পিষ্ট হয়ে মরছে পথচারী, সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ। সরে জমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নতুন পুরাতন মিলে ৫৩টি ইট ভাটা রয়েছে। বৈধ রেজিষ্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ৩টির। বাকী ৫০টি ভাটারই রেজিষ্ট্রেশন সহ বৈধ কাগজপত্র নেই। স্থানীয় কৃষি বিভাগ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটা গুলো। আর এ জন্যও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার ও তিগ্রস্থ হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার কর্মরত কর্মচারীরা জানান পরিবেশ অধিদপ্তর ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন ভাটা গুলো থেকে। ভাটা গুলোতে মাটি ও ইট বহনকারী বৈধ কাগজবিহীন ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ড্রাইভিং সনদবিহীন, অপ্রশিতি ও অদ চালক দ্বারা চালিত হওয়ায় ট্রাক পরিচালনা আইনের বিন্দু বিসর্গ পর্যন্ত জ্ঞান নেই এদের উদরে। যে কারণে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ পথচারীদের। গত বছরের ডিসেম্বরে ৩ জন নিহত হয় এবং প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। অনেকেই আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এ সব ঘটনায় আইনী পদপে না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাটা কর্তৃপসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালকরা। পরিবেশ সংরণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমালা-১৯৯৭, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১ এবং শব্দ দুষণ বিধিমালা-২০০৬, ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এবং সংশোধিত ২০১৯ এর ধারা ১৫/১, ১৫/২ ধারাকে উপেক্ষা করে একাধিক ইট ভাটা নির্মাণের কাজ চলছে। অনাবাদি ২ একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইট ভাটা নির্মাণে ১২ একরের অধিক দো-ফসলী আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিধিমালা অনুযায়ী ভাটার ১ কি: মি: এর মধ্যে আবাসিক বাড়ী, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি’র পাকা রাস্তা থাকা চলবে না। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক ইট ভাটার জন্য নির্ধারিত স্থানটি কৃষি জমি হিসেবে দাবী করলে এবং এ অফিস কর্তৃক ইট ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হলে উদ্যোক্তা ইট ভাটা বন্ধ করতে বাধ্য থাকবে এবং কোন প্রকার তিপূরণ দাবী করতে পারবে না। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা স্থানীয় কৃষি অফিস দাবী তো দুরের কথা তাদের চোখের সামনে একের পর এক গড়ে উঠা প্রতিটি ভাটা নির্মাণে ১০ একরের বেশী কৃষি জমি ব্যবহার করছে ভাটা মালিকরা। ইট ভাটার জন্য যে স্থান হতে মাটি কাটা হবে ওই স্থানে পাড় বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পুকুরে পরিণত করতে হবে যাতে সেখানে মৎস্য চাষ করা যায় এবং যথাযথ কর্তৃপরে অনুমোদন সাপেে মজা পুকুর, খাল, দিঘী, নদ-নদী, হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল বা তৎসমতুল্য জায়গা থেকে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা যেন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। এ ভাটা গুলো এ সব নিয়মের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখালেও কর্তৃপ অজানা কারণে নিশ্চুপ। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়ক থাকা স্বত্বেও চৈত্রকোল ইউনিয়নে ছিলিমপুরে দুটি ইট ভাটা এবং আতা মন্ডল, জোয়াদ মন্ডল, ফারুক হোসেন, আলমগীর বাদশা, আ: আজিজ হাজী, শহিদুল ইসলামসহ অনেক ইট ভাটা মালিক গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ব্যবহারে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কাঁচা রাস্তায় ভাটার কাজে নিয়োজিত যানবাহন গুলোর যাতায়াতের ফলে সাধারণ পথচারীসহ নানা বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছেন অনেকে। সকালে স্কুল কিশোর শিার্থীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সকালে স্কুল ব্যাগ নিয়ে পরিস্কার কাপড় চোপড় পরে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর বিকেলে যখন বাড়ী ফেরে তখন দেখা যায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের আদ্যপ্রান্ত ধুলায় জড়ানো। এতে এ সব শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ কাঁচা পাকা এই রাস্তা গুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী জানান, কৃষি বিভাগের অধীনে জনগণকে সচেতনতা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ভাটায় মোবাইল কোট পরিচালনা করা হয়েছে।