শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: সঙ্গীতকে ভালোবাসেন না এমন খুজে পাওয়া খুব মুশকিল। ঢোলের বাড়ি পড়লেই নাচুনী বুড়ির মত নাচতে থাকেন কোথায় বাজছে এই ধিতাং ধিতাং বোল। কিন্তু যারা এই ভালোবাসার সঙ্গীতকে চর্চা করে মানুষের মুখে আনন্দের হাসি ফোটান, পর্দার আড়ালের সেই নীরব কান্না কি কেউ শুনতে পান; বোধ হয় না। এমনি একজন শিল্পী হচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করা কোকিল কোন্ঠি আশেক নুরী বাউল। নিজেকে গানের মাঝে উজাড় করে দিয়ে সবার মনের খোরাক যোগাতে চান আশেক নুরী। সুমধুর কন্ঠই তাঁকে ঘর থেকে বের করে এনে দিয়েছে পরিচিতি, খ্যাতি আর প্রতিষ্ঠা। এ অঞ্চলে সবাই একনামে চেনে তাঁকে। এমন লোক খুব কমই আছে- যিনি আশেক নুরীর ক্যাসেটের গানের সাথে ঠোঁট মেলাননি। ইতিমধ্যে পঞ্চাশটিরও বেশী গানের ক্যাসেট বের হয়েছে তাঁর। বিশ্ববাণী নামের বগুড়ার একটি রেকর্ডিং কোম্পানী এককভাবে বাজারজাত করছে আশেক নুরীর এই গানের ক্যাসেট। আশেক নুরীর টানাপোড়েনের সংসারে মুলত বিশ্ববাণীর প্রদত্ত অর্থেই স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। গাইবান্ধা জেলার অর্ন্তগত সাদুল্যাপুর উপজেলার বোয়ালীদহ গ্রামের এক হত-দরিদ্র পরিবারে জন্ম আশেক নুরীর। দারিদ্র্যের অতি নির্মম কষাঘাতে নিষ্পেষিত অসহায় পিতা কলিম উদ্দিন কম বয়সেই নুরীকে বিয়ে দেন পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের রাজারামপুর গ্রামের ইদু নামের এক যুবকের সাথে। টানা দু’বছর স্বামী-সংসার করার পর তাকে কিছু না জানিয়েই হঠাৎ দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার স্বামী। দরিদ্র পিতার অসহায় কন্যা নুরী কোন প্রকার প্রতিবাদ না করেই নিঃশব্দে চলে আসেন বাবার বাড়ী। কৈশরের সুর চর্চা শুরু হয় আবার। আশপাশের অনুষ্ঠান গুলোতে একের পর এক ডাক পড়তে থাকে তার। প্রফুল্লচিত্তে তিনি অংশ নেন সে সব অনুষ্ঠানে। এভাবে কোন এক অনুষ্ঠানেই পরিচয় হয় চতরা ইউনিয়নের চকভেকা গ্রামের লাল মিয়া বয়াতির সাথে। পরিচয় থেকে প্রণয় এবং অবশেষে তা গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। সমমনা স্বামীর সাথে চলে গানের নিয়মিত রেওয়াজ। বিকেল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে সঙ্গীত চর্চা। পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে এখন আশ পাশের উপজেলা গুলোতেও চলে আশেক নুরীর একক সঙ্গীত অনুষ্ঠান। নারী পুরুষ নির্বিশেষে উপচেপড়া ভিড় অনুষ্ঠান গুলোতে। দীর্ঘদিন ধরে করোনার কারণে সব ধরণের অনুষ্ঠান বন্ধ। যে কারণে কিছুটা হলেও টানা পোড়েন সময় যাচ্ছে নুরীর। কোথাও কোন অনুষ্ঠান নেই। এজন্য নেই আয় রোজগার। নানা প্রসঙ্গ নিয়ে খোলামেলা কথা হয় আশেক নুরীর সাথে। অভাবের কারণে শৈশবে তিনি পড়ালেখার ইতি টানেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত যাতায়াত ছিল তাঁর। শাঁক-সব্জিযুক্ত সাধারণ খাবারই তার প্রিয়। প্রিয় শিল্পী আব্দুর রহমান বয়াতি। ভাল কোন গান আর ক্যাসেট কোম্পানীর ভাল পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এক গানেই বাজার হিট করতে চান নুরী। আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা পেলে তিনিও আসতে পারবেন কাঙ্গালীনি সুফিয়া বা ফোক শিল্পী মমতাজের মত লাইম লাইটে- এ প্রত্যাশা করেন তিনি। আশেক নুরী জীবনে অনেক বড় শিল্পী হতে চান। এজন্য তিনি সকলের দোয়াও প্রত্যাশী। যতœ পেলে সেও হতে পারে বাংলার এরকটি পপ সম্রাজ্ঞী।