শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন
স্ট্যাফ রির্পোটার : রংপুরে বিখ্যাত ‘হাঁড়িভাঙ্গা আমের’ বাম্পার ফলন হলেও কঠোর লকডাউনে হাঁড়িভাঙ্গা নিয়ে বিপাকে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। শত কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাড়িভাঙ্গার দখলে রয়েছে রংপুরের বাজারগুলো। তবে কঠোর লকভাউনে দূরপাল্লার বাস, ট্রেনসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাঁড়িভাঙ্গার মূল উৎস মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জে আমের বাজারে ধস নেমেছে। পাইকারী গ্রাহক না থাকায় ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। গ্রাহক না থাকায় মৌসুমি আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে গত বছর প্রতি মণ আম দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এবার তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার পদাগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্লাস্টিকের ক্যারেটে থরে থরে সাজানো হাড়িভাঙ্গা আম। গ্রাহকের অভাবে আম নিয়ে অপেক্ষায় দিন পার করছেন শত শত আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বিক্রির অভাবে আড়তে স্তুপ করে রাখা হয়েছে আম।
প্রতি বছর হাঁড়িভাঙ্গা আম বিক্রি করে রংপুরের চাষিরা আয় করেন প্রায় ২০০ কোটি টাকার উপরে। এবার সেই চিত্র ভিন্ন। আম চাষিরা চলতি মৌসুমে আম বিক্রি করে ১০০ কোটি টাকা আয় করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আম বাগান ক্রয় করা রবিউল নামে এক ব্যবসায়ী জানান, “দিনে পর দিন যেভাবে দাম কমে যাচ্ছে তাতে মনে হয় এবার হাড়িভাঙ্গা আমে লোকসানের সম্ভাবনা বেশী রয়েছে। তিনি আরও বলেন, লকডাউনে হয়তো ২০ টাকা বা তার কমে কেজি দরে এবার আম বিক্রি করতে হবে।”
অনলাইনে আম ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম জীবন বলেন, “অনলাইনে অর্ডার নিয়ে সেই অনুযায়ী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পাঠাতাম। কিন্তু লকডাউনে তো ক্রেতা কুরিয়ার থেকে এসে আম তুলতে পারবে না।”
আম ব্যবসায়ী মহাসিন মিয়া জানান, ‘লকডাউনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা আম কিনতে চাচ্ছেন না। কারণ, ঢাকায় নিয়ে তারা কার কাছে আম বিক্রি করবেন।”
আম চাষি রফিক ইসলাম জানান, গত বছর এই সময় তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁড়িভাঙ্গা আমের মণ গেছে। কিন্তু এবছর সেই আম ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা করে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বাজারে দাম না থাকায় বাগানেই আম পেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, উপজেলায় এক হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গা আম বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ থেকে ১৩ টন আম উৎপাদন হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হলেও লকডাউনে দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক বিধু ভূষণ রায় বলেন, ‘দেশের এমন পরিস্থিতিতে আম পরিবহণ করতে হলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চাষি ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয় করতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় আম চাষিদের উদ্যোগ নিতে হবে।’ তবে লোকশানের মুখে পড়লে আগামীতে বাগান মালিকরা আম চাষে আগ্রহ হারাবে বলে মনে করেন তিনি