মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ অপরাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার: একটি প্রচলিত গান আছে, “কি সুন্দর এক গানের পাখি/মন নিয়া সে খেলা করে/ দেখতে ভালো/গায় সে ভালো/আরও ভালো লুকায়িত তার অন্তরে”- সত্যিই এমনি একটি গানের পাখি উড়ছে পীরগঞ্জের গানের আকাশে। কিন্তু অবস্থাটা খানিকটা এরকম- ‘নীড়েরই ঠিকানা পাবে কি না/ পাখিটা নিজেই জানে না’। মুখে যাদু নিয়ে জন্ম নেয়া এই পাখিটির নাম শ্রী পরেশ চন্দ্র। বয়স ২৪ বছর।বাড়ি পীরগঞ্জ পৌরসভার উত্তর পার্শ্বেই উজিরপুর গ্রামে। বাবা স্বর্গীয় শ্রী বিনোদ চন্দ্র ও মাতা শ্রী মতি রাধা রানী দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। ৭ ভাই-বোনের মধ্যে পরেশ ৪র্থ। চমৎকার মিশুক ও ভালো ব্যবহারের অধিকারী সে। ছোট বেলা মানে প্রায় ৮ বছর বয়স থেকেই থানা সদরের নাটোর সুইটস নামের একটি মিষ্টির হোটেলে বয় হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে ওই হোটেলটির কার্যক্রম কম হওয়ায় শুধুমাত্র পরেশকে দিয়েই চলছে হোটেলটি। অসাধারন প্রতিভার অধিকারী পরেশ। সুমধুর তার গানের গলা। তার আয়ের অর্থ দিয়েই সে একটি অডিও, ভিডিও মোবাইল কিনেছেন। ওই মোবাইল ফোনই তার ওস্তাদ। মোবাইল দিয়ে গান শিখেই সে বিগত ১৫/১৬ সালে আন-সান কুড়িয়ে পাওয়া সুর এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার মুন্নী সাহা উপস্থাপনায় পরেশ চন্দ্র আমার মন চায়না এ ঘর বাঁধিবো কিশোরী, কি সুন্দর একটা গানের পাখি গান পরিবেশন করেন। শুধু তাই নয় বর্তমানে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে যে অনুষ্ঠানগুলো হয় তাতে এই পরেশকে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়। সারাদিন হোটেলে রাত করে মঞ্চ প্রোগ্রাম করে পরেশ। এতে হোটেল মালিক সুশীল ঘোষের কোন আপত্তি বা অভিযোগ নেই বলে জানালেন পরেশ। দৈনিক আলোর সংবাদ প্রতিবেদকের সাথে ওই হোটেলে বসে মিষ্টি খেতে খেতে কথা হয় পরেশের সাথে এ প্রতিবেদকের, কখন গান প্রাকটিস করা হয়? বলেন ভাই যখন দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায় তখন আমি দোকানের ভিতরে প্রথমে মোবাইলে রেকর্ড করা গানটি শুনি তারপর মোবাইলের রেকর্ড করা গানের সাথে সুর মেলাই এভাবেই কখন যে আমার হাজার হাজার ভক্ত হয়েছে টের পাইনি। উপজেলার যে কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে তারা আমাকে ডাকে আমি গিয়ে ৩ / ৪ টি অথবা দর্শকদের ভাল লাগা গানগুলো পরিবেশন করি। কত টাকা দেয়? বলেন ভাই টাকা আমার কাছে কোন ব্যাপার নয়, দর্শকরা যে আমার গান শুনে আনন্দ পায় এতেই আমি খুব খুশি। তবে যদি একটু ভাল ওস্তাদের কাছে শিখতে পারতাম তাহলে আরও বেশি ভাল হতো। হোটেল মালিক শ্রী সুশীল ঘোষ বলেন পরেশ আমার দোকানে ছোট থেকে আছে। ও অত্যন্ত বিশ্বস্ত। ওর গান আমি নিজে কখনও শুনেনি। মানুষের কাছে শুনে লোভ হলো। একদিন একটি প্রোগ্রামে ওর গান শুনলাম। অত্যন্ত ভাল লাগল। আমি গর্বিত যে আমার দোকানের কর্মচারী সারাদিন দোকানদারী করেও মঞ্চে গান বলার মতো শিল্পি হয়েছে। সামান্য একজন হোটেল কর্মচারী হয়েও শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় মোবাইল থেকে গান শুনে শিখে মঞ্চে উপস্থাপন করা সত্যিই অত্যন্ত দুরুহ। কখন তোমাকে সবচেয়ে ভাল লাগে এর উত্তরে পরেশ বলেন যখন আমার গান শুনে দর্শকরা ওয়ান মোর বলে তখন। উন্নত সঙ্গীত শিায় , ভাল ওস্তাদ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পরেশ দেশের স্বনামধন্য শিল্পিতে পরিনত হবে বলে এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন।