শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪২ অপরাহ্ন
স্টাফ রির্পোটার: শিাই জাতির মেরুদন্ড। একজন শিার্থীকে সুশিতি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কারিগর হলেন শিক। তাই শিক তাকে বলা হয় মহান পেশা। কিন্তু সেই শিকই জালিয়াতির মাধ্যমে পাওয়া সনদে চাকরি করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। জাল সনদে চাকরি পাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে আশ্চর্যের বিষয় এক কলেজেই জাল সনদে চাকরি করছেন আট শিক। কয়েক বছর ধরে জাল সনদে এতজন শিক চাকরি করলেও নজরে আসেনি কর্তৃপরে। দেশের যেসব উপজেলায় কোনো সরকারি কলেজ ছিল না, সেগুলোতে একটি করে বেসরকারি কলেজকে জাতীয়করণ বা সরকারি করা হয়েছে। এই কলেজগুলো সরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। পরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট দেশের ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে সরকারি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিা মন্ত্রণালয়। এর আগে-পরে আরও ৩২টি কলেজ জাতীয়করণ হয়। কলেজ সরকারি হলেও এখনো সরকারি বেতন-ভাতাসহ অনান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না কলেজগুলোর শিক-কর্মচারীরা। কারণ সংশ্লিষ্ট কলেজের শিকদের সব সনদ যাচাই-বাছাই করছে শিা মন্ত্রণালয়। প্রথমে মাধ্যমিক ও উচ্চশিা অধিদপ্তর (মাউশি) যাচাই-বাছাই করার পর এখন মন্ত্রণালয়ে আবার যাচাই-বাছাই করছে। শিকদের সব সনদ যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করছেন বেসরকারি শিক নিবন্ধন কর্তৃপ (এনটিআরসিএ)। আর যাচাই করতে গিয়েই সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের ৮ শিকের সনদের গড়মিল পেয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট শিকদের সনদগুলো ভুয়া এবং জাল জালিয়াতি মাধ্যমে তৈরি করা। তাই যাচাই-বাছাই শেষে ওই ৮ শিকের সনদ ভুয়া উল্লেখ্য করে সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যকে একটি চিঠি দিয়েছে এনটিআরসিএ। ওই চিঠিতে শিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে মামলা করার জন্যও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সেই চিঠির একটি অনুলিপি পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও (ওসি) পাঠানো হয়েছে। যা আছে শিকদের ভুয়া সনদেঃ এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যকে দেওয়া ওই পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে-সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সুরাইয়া বেগমের সনদটি সঠিক নয়। উত্তীর্ণ রোল নম্বরটি অন্য ব্যাক্তির- তার নাম রোজিনা আক্তার (রেজি নম্বর-১০০০০৪৩৩৬৮)। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হাসিনা আক্তারের সনদটি সঠিক নয়। উত্তীর্ণ রোল নম্বরটি অন্য ব্যাক্তির, তার নাম জাহাঙ্গীর আলম (রেজি নম্বর-১০০০০০৯২৭)। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অপর প্রভাষকঃ মো. শহীদ বদরুদ্দোজার সনদটিও সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০০৭ সালের তৃতীয় শিক নিবন্ধন পরীার উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লুর রহমান সম্পর্কে বলা হয়েছে, সনদটি সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০১২ সালের অষ্টম শিক নিবন্ধন পরিার উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। রোল নম্বরটি প্রভাষক ব্যবস্থাপনা পদের নয়; এটি সহকারী শিক, পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফারমারিং পদের। ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক আয়শা প্রধানের বিষয়ে বলা হয়েছে, সনদটি সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০১৩ সালের নমব শিক নিবন্ধন পরীায় উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। ইতিহাস বিভাগের অপর এক প্রভাষকঃ কেয়া শারমিন সম্পর্কেও একই কথা বলা হয়েছে যে, তার সনদটি সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০১৩ সালের নবম শিক নিবন্ধন পরীায় উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। ইতিহাস বিভাগের আরেক প্রভাষকঃ ফারহানা খাতুন সম্পর্কে বলা হয়েছে, তার সনদটি সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০১৩ সালের নবম শিক নিবন্ধন পরীায় উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। রোল নম্বরটি লেকচারার, হিসটোরি পদের নয়, এটি লেকচারার, সোসিওলোজি পদের। এছাড়াও ওই কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক হুরুন্নাহার খাতুন সম্পর্কে বলা হয়েছে, সনদটি সঠিক নয়। রোল নম্বরটি ২০১৪ সালের দশম শিক নিবন্ধন পরীায় উত্তীর্ণ ফলাফলের তালিকায় নাই। সনদে কোন বিষয়ে লেকচারার তা উল্লেখ নাই। তা ছাড়া রোল নম্বরটি লেকচারার পদের নয়। এই বিষয়ে জানতে সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্য রাশেদুন্নবী লাবু চৌধুরী জানান ৮ জন শিক্ষকের নিবন্ধন সনদ জাল কি না জানি না। তবে এনটিআরসিএ অথবা অনলাইনে সার্চ দিলে জানা যাবে। তারা কোন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক নয়। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সরেস চন্দ্র জানান ‘এই বিষয়ে কোনো চিঠি বা লিখিত কোনো ডকুমেন্টস এখনো আমি পাই নাই। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এমন একটি ঘটনার কথা জেনেছি।’ প্রসঙ্গত, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার শাহ্আব্দুর রউফ কলেজ ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিায় শাখা, ডিগ্রী পর্যায়ে বিএ, বিএসএস, বিএসসি সম্মান কোর্স বাংলা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিষয় চালু রযেছে। বর্তমান অত্র শিার প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন ছাত্র ছাত্রী কলেজে অধ্যায়নরত আছেন।