শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন
‘আশা’- দুটি অরে গঠিত ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু আয়তনে ছোট হলেও এর ব্যপকতা আর গভীরতা অনেক বেশি। মানুষ যখন সবকিছু হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যায়, তখন আশা ছাড়া তার অবলম্বন বলতে আর কিছুই থাকেনা। সাঁতার না জানা মানুষটি যখন গভীর জলাশয়ে হাবু-ডুবু খায়, তখনও সে শ্যাওলা ধরে বাঁচার আশায় প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। অথচ, শ্যাওলা যে কোন অবলম্বন নয় এটা সে ভালো করেই জানে। সবচেয়ে বড়কথা হলো- মরণকে নিশ্চিত জেনেও একজন মৃত্যূ-পথযাত্রী ব্যক্তি তার সর্বশক্তি দিয়ে হলেও মৃত্যূদূতের সাথে লড়াই করে জীবনটাকে টিকিয়ে রাখার আশায়। কবিও বলেছেন- “সংসার সাগরে দুঃখ তরঙ্গের খেলা আশা তার একমাত্র ভেলা।“তবে প্রত্যাশার কথাটি একটু ভিন্ন। আশা নিজের চাওয়া; কিন্তু প্রত্যাশা হচ্ছে অন্যের কাছ থেকে কিছু পাবার আশা করা। অর্থাৎ- আশার প্রতিদান হচ্ছে প্রত্যাশা। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে- আমরা বেসরকারী শিক সমাজ এই আশা-প্রত্যাশার দোল-চালের মধ্যে প্রায় দিশেহারা হতে চলেছি। আমাদের আশা এক; কিন্তু প্রত্যাশা বা প্রাপ্তি ভিন্ন। আমাদের সমাজ এক; কিন্তু সম্মানী ভিন্ন। আমাদের বই-পূস্তক, সিলেবাস, পাঠদানের দায়িত্বসহ শিার নানামুখী কার্যক্রম সবই সমান; তবুও অনুদানে বৈষম্য। আমাদের আশা, শুধুমাত্র এই বৈষম্যের বিলোপ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে আমরা এমন একটি প্রত্যাশা করতেই পারি- আমাদের এই আশাটিও পূরণ করা হোক। মাঝে মাঝে আমি চিন্তা করি (আমি কিন্তু চিন্তাবিদ নই), সত্যিকার অর্থে আমাদের ঘাটতিটা কোথায়? আশায় নাকি প্রত্যাশায়। ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন সামাজিক ও গণ-যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াই। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের লেখা এতদ্সংক্রান্ত খবর, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয় ও মন্তব্যগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে এর মানানসই একটা সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। কিন্তু পাইনা; হয়ত আছে, আমার চোখে পড়েনা। অথবা, উপলব্ধি করে চিন্তা-চেতনার গভীরে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা এখনও আমার হয়নি। তবে একটা জিনিস আমাকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে, তা হলো- আমরা তো ০৫ লাধিক বেসরকারী শিক। আমরা তো সকলেই উচ্চ শিতি, মানুষ বানানোর কারিগর। তবে কেন আমরা চুপ করে বসে আছি? কেন আমরা আমাদের ভেতরের কথাগুলোকে উগ্রে দিতে পারছিনা? একবার ভেবে দেখুন, আমরা সবাই যদি প্রতিদিন অন্তত: একটা করেও আমাদের ভেতরে সুপ্ত থাকা চিন্তা-চেতনা আর স্বপ্নের কথাগুলো বলি, তাহলে ০৫ লাধিক পরামর্শ আসবে। আর জাতীয়করণের দাবী জোরদার করতে আমাদের সবার এই মতামত বা সমর্থনগুলোই যথেষ্ট। আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন বেসরকারী শিকবৃন্দ, আমরা কি সবাই পরিষ্কার মনে, একই মানসিকতায় জাতীয়করণের স্বার্থে নিজ অবস্থান থেকে এই ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছি বা করার চেষ্টা করছি? যদি হ্যাঁ-ই বলি, তাহলে গ্রুপ পেজগুলো তো ল ল মন্তব্য দিয়ে ভরিয়ে যাবার কথা। লাইভ অনুষ্ঠানগুলোতে তো কম করে হলেও ১শ থেকে ১০শ ারববিৎং হওয়ার কথা। কিন্তু কই? বরং এমন অনেকে আছি যারা এধরনের লেখা বা অনুষ্ঠান হলে মনে করি- ‘এসব অহেতুক প্যাচাল।‘ টিভি, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্ট ফোনটাকে অন্য মোড়ে ঘুরিয়ে নেই। কেন? আমাদের ভয় কিসের? আমরা তো আন্দোলন করছিনা? ররং আমরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যথাযথ কর্তৃপরে কাছে আমাদের ন্যায্য দাবী-দাওয়া গুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে পেশ করছি। আমাদের প্রত্যাশা, কর্তৃপ বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমাদের মাঝে কিছু প্রবীণ শিক আছেন, যেনারা ০৩ মাস, ০৬ মাস কিংবা ০১ অথবা ২ বছর পর অবসরে যাবেন। এমন কিছু শিক এসব দাবী-দাওয়ায় নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন। কারণ, তাঁরা মনে করেন যে তাঁদের সময়ে হয়ত বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারী বা জাতীয়করণ আর হচ্ছেনা। তাঁরা এর সুফল হয়ত ভোগ করতেও পারবেন না। তাঁদের কয়েক জনের সাথে মত বিনিময় করে এমটাই জানতে পেরেছি। তবে একটা বিষয়ে কিন্তু তাঁরা আমাদের সাথে সম্পূর্ণ এক মত। সেটা হচ্ছে- জাতীয়করণ হতে যাচ্ছে বা হবে। আমি সেই জের ধরেই তাঁদেরকে অনুরোধ করছি- যাতে আপনারাও এর ভাগীদার হতে পারেন, আসুন সেই পথেই এগিয়ে যাই। এটা আপনাদের নিকট আমাদের প্রত্যাশা। এতে দোষের কি! কারণ, এইমাত্র জন্মগ্রহণ করা কচি শিশুটাও কিন্তু খাবারের দাবী নিয়ে ওঁয়া- ওঁয়া করে কান্না করে। আরেকজন প্রবীণ সাংবাদিক যিনি আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন (তবে লেখার খাতিরে তার নামটা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা) আমাকে খানিকটা গায়ে পড়েই পরামর্শ দিলেন- ‘তুমি এসব নিয়ে লেখা-লেখি করো না। মনে হয় না তেমন কোন কাজ হবে। তোমরা বলছ জাতীয়করণ করলে শিার মান বাড়বে, কিন্তু আমি বলছি কমবে। তুমি দেখ, যে সব সরকারী প্রতিষ্ঠান আছে সে সবের লেখা-পড়ার হাল-চাল! সরকারী হলে তোমরাও এমনি হবে।‘হায়রে যুক্তি! আমি চুপ-চাপ ছিলাম। কারণ, বয়সে উনি আমার অনেক অনেক বড়। শধু বললাম- পুকুরে বাস করে মহাসাগরের চিন্তা করবে না। আপনার সাথে পরে কথা হবে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিদায় নেবার সময় কানে কানে এটাও বলে দিলেন- ‘এটাকে আবার তোমার লেখার বিষয় হিসেবে টেনে নিও না।‘ আমি মৃদূ হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লাম। কারণ এখানে আমাদের আশা-প্রত্যাশার কিছুই নেই। বরং নতুন করে আরেকটি শব্দ ‘হতাশা’ প্রবেশ করেছে; যেটাকে আমরা মোটেও বরখাস্ত করি না।
এবারে ০৫ অক্টোবর ২০২০ সালের বিশ্ব শিক দিবসে আমাদের মহা সামবেশের আশা-প্রত্যাশাগুলোর দিকে নজর দেয়া যাক। জাতীয় প্রেস কাব চত্ত্বরে বিশ্ব শিক দিবসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আমাদের এবারের মহা সমাবেশ। ইউনেস্কোর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ব শিক দিবস শিা ও উন্নয়নের েেত্র শিকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ পালন করা হয়। হয়ত এ দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাদের সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপ এ দিবসটিকে এই সমাবেশের জন্য বেছে নিয়েছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও মাননীয় শিামন্ত্রী, শিা উপমন্ত্রী ও শিা সচিব মহোদয়কেও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বেশির ভাগ সংগঠনকে চিঠি মারফত সমাবেশটি সফল করার ল্য সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে। অতএব বিষয়টি বিতর্কাতীত। এই মহা সমাবেশটিকে ঘিরে তাঁদের আশা- আমরা সফলকাম হব; তাঁদের প্রত্যাশা- আমরা সকলেই যেন নিজ দায়িত্বে স্বত:স্ফুর্তভাবে সময় মত হাজির হই। আমরা যারা শিক আছি, আমাদের আশা- আমরা সেখান থেকে বিরাট কিছু পাচ্ছি ইনশাল্লাহ্। অপরদিকে আমাদের প্রত্যাশা- সেদিনেই জাতীয়করণের ঘোষণা আসুক। আমাদের সকলের সমষ্টিগত প্রত্যাশা- মুজিব বর্ষেই যেন সকল বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠানসমূহ (যেমন- স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরী শিা) জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে আরেকটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। অপরদিকে নন-এমপিওভূক্ত শিক মহোদয়, যারা আমাকে অবরে-সবরে খোঁচাচ্ছেন কেন আমি আপনাদের বিষয়ে লিখছিনা বা লেখার চেষ্টাও করছিনা; তাদেরকে বলছি। জনাব, আপনারাও কিন্তু এর বাহিরে নন। আপনারাও আসুন। আমরা সবাই মিলে জাতীয়করণের দাবীতে মিশে যাই। আপনারা আপনাদের কষ্টের কথাগুলো বলবেন। দেখবেন, জাতীয়করণ হলে এমপিওর দাবী এমনিতেই পূরণ হবে ইনশাল্লাহ্। আপনাদের কষ্ট আমরা বুঝি। মূলত: আমরা সবাই এক। আমরা সবাই শিক। আমি জানিনা এবারে আমাদের বিশ্ব শিক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি। তবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘দৈনিক শিকের কথা’- নামের একটি আইডিতে দেয়া নজরুল স্যার এবং বাংলাদেশ শিক সমিতি (বাশিস) এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্য ফজর আলী স্যারের লাইভ অনুষ্ঠানের সে দিনের শ্লোগান থেকে যা পেলাম, তা হলো- “বঙ্গবন্ধুর শিাদর্শন,করতে হবে জাতীয়করণ”। চমৎকার শিরোণাম। সেখানে ফজর আলী স্যার বেশকিছু গ্রহণযোগ্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি শিকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের উৎসাহিত করার কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন বেসরকারী শিা ব্যবস্থায় সবচেয়ে তিগ্রস্থ হচ্ছে এ দেশের সাধারন জনগণ, অভিভাবক ও শিার্থী। জাতীয়করণ হলে তারা আর্থিক দিক থেকে বেশ খানিকটা সাশ্রয় পাবে। তিনি ঐ দিন জাতীয়করণের ব্যানার নিয়ে “জাতীয়করণ চাই” লেখা শ্লোগানে অভিভাবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দিয়ে আমন্ত্রন জানানোর বিষয়েও অনুরোধ জানিয়েছেন। এটা ওনার প্রত্যাশা। আমাদের উচিত এমন একটি আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
পরিশেষে আমাদের আশা ও প্রত্যাশাগুলোর যূগল-বন্দি ঘটে আমাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটুক। ‘বিশ্ব শিক দিবসে শিা ও উন্নয়নের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ’ ইউনেস্কোর এই কথাটি বিবেচনায় এনে সরকারী শিা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি শিা েেত্র বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো যে অসামান্য অবদান রাখছে- তার ভারসম্য রাকারী জাতীয় করণের স্বীকৃতি আমরা ইনশাল্লাহা আমরা যেন পাই। এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
লেখক: শিক, কবি, কলামিস্ট।
জাহাঙ্গীরাবাদ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পীরগঞ্জ, রংপুর।
E mail: rangasarker100@gmail.com