শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২২ পূর্বাহ্ন
এ টি এম আশরাফুল ইসলাম সরকার রাংগা।
আগামী ০৫ অক্টোবর- ২০২০ সাল, সোমবার ‘বিশ্ব শিক দিবস’। ১৯৯৫ সালের ০৫ অক্টোবর থেকে সারাবিশ্বে এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়ে থাকে। ইউনেস্কোর ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ব শিক দিবস শিা ও উন্নয়নের েেত্র শিকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ এই দিনটি শিক দিবস হিসেবে পালন করছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশও এই দিবসটি বিশ্ব শিক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশে ‘বিশ্ব শিক দিবস-২০২০’ পালন উপল্েয বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবরগুলো থেকে যতটুকু জানতে পারলাম, তাতে এবারের অর্থাৎ ২০২০ সালের ০৫ অক্টোবরকে ঘিরে বেশ সোচ্চার হয়েছেন বাংলাদেশ শিক সমিতি (বাশিস) ও বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিা প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ বৈষম্যের শিকার সম্মানীয় শিকবৃন্দ। এ ল্েয জাতীয় প্রেসকাব চত্ত¡রে মহা সমাবেশ করবে তারা। তাদের দাবী একটাই- ‘এমপিওভূক্ত বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠান গুলো জাতীয়করণ। ‘বাংলাদেশ শিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও এমপিওভুক্ত শিাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের মুখপাত্র নজরুল ইসলাম রনি স্যার এতে সভাপতিত্ব করবেন। কতদূর সফল হতে পারব তা ০৫ তারিখের পরই ভালো বলা যাবে। তবে এমন একটা কর্মসূচীর কথা শুনে মনে আশার আলো জন্ম নিয়েছে। বিশেষ করে বাশিস যে নড়ে-চড়ে বসেছেন তার প্রমাণ তো অন্তত: পেলাম। নি:সন্দেহে এ দাবী আমাদের সকলের প্রাণের দাবী। এই দাবী আমাদের মর্যাদা রার দাবী। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন একটু কম হলেও এর আগে বাংলাদেশের কোনো না কোনো স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় সংগঠনগুলোর এরকম ছোট-খাটো (আমি কোন সংগঠনকেই ছোট অর্থে বলছিনা; আমরা সবাই সমান) সমাবেশের খবর চোখে পড়ত। জাতীয়করণের ব্যানার নিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্মারকলিপি প্রদানের ছবিও ছাপানো হত। এছাড়াও দেশব্যাপী আন্দোলনে বেসরকারী শিকদের অবস্থান ধর্মঘট দেখেছি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় বরফ সমান ঠান্ডা, মগজ গলা রোদ আর ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে তারা অনশন করেছে। পিপাসা আর খাদ্যের কারণে অনেকের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হয়ে গেছে। পৃষ্ঠদেশ জুড়ে লেখা ছিল জাতীয়করণ চাই। সরকারের কাছে স্মারকলিপি পর্যন্ত পৌঁছানোর খবর দেখেছি। কিন্তু সবকিছু মিলে ‘যে মামা সেই মামী/মাঝখানে টানাটানি।
জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তা ও এর সুফল নিয়ে লেখা অভিজ্ঞ, শিা বিশেষজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গের মতামত, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কলাম, টক শো, লাইভ অনুষ্ঠান, ফেসবুক পোস্ট গুলো আপনারা নিশ্চই দেখেছেন এবং পড়েছেন। আপনি নিজেও হয়ত এ নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনার কথা বিভিন্ন মাধ্যম বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে শেয়ারও করেছেন। কাজেই এ নিয়ে পূণরাবৃত্তি করা বিরক্তিকর বোধ করছি। বরং আজ আমাদের ভাবনাগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকারের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মুজিববর্ষেই সকল বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে আমাদের প্রস্তুতি কতখানি এবং এ ল্েয আমাদের করণীয় কি অথবা আমরা আসলে কি বলতে চাই; এরকমই হওয়া উচিত। এজন্য আমরা আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগাতে পারি। ইতোপূর্বে যে সব কর্মসূচি ভেস্তে গেছে তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। ঐ ব্যর্থতার ফাঁক-ফোকড়গুলো বন্ধে আমাদের কি করা উচিত, তা নিয়ে আগেই পরামর্শ করে তা টুকে রাখতে পারি। আমাদের মাঝে অনেক অভিজ্ঞ শিক মহোদয় শিা সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েব পোর্টাল, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় (যেমন: বে-শিক জাতীয়করণ আন্দোলন, বাংলাদেশ শিক ফেসবুক ফোরাম, বাংলাদেশ বেসরকারি শিক-কর্মচারি ফোরাম (বাবেশিকফো), দৈনিক শিা, দৈনিক শিাবার্তা, দৈনিক আমাদের ফোরাম, শিক বাতায়ন, দৈনিক শিা সংবাদ সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা অথবা অন্য যে কোন মাধ্যমে) তাদের মতামতগুলো ব্যক্ত করেছেন সে গুলোর সাহায্য আমরা নিতে পারি। অনেকে লিখতে পারেন নি, কিন্তু আপনার একটা লেখায় হয়ত মন্তব্য (ঈড়সসবহঃং) করেছেন, সুন্দর সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী পরামর্শ দিয়েছেন; সেগুলোকে আমরা শ্রদ্ধার সাথে নিয়ে মহা সমাবেশে উপস্থাপন করতে পারি। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা বিভিন্ন অভিজ্ঞতাগুলোকে আমরা সমন্বয় করে কাজে লাগাতে পারি কি না সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত। জাতীয়করণের দাবীতে সবাই সমান সক্রিয় না থাকলেও কেউ কিন্তু নিষ্ক্রিয় নেই। তাই এ দাবীর অংশীদারিত্বে সবার অধিকার সমভাবে প্রযোজ্য।
ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দলীয় বা সাংগঠনিক পর্যায়ের বিতর্কিত স্বার্থগুলোকে অবশ্যই বর্জন করা উচিত। এগুলো আমাদের চরম দুর্বলতার সুযোগ করে দেয়। আমাদের সবার স্বার্থ এক হওয়া চাই। যা বলব, সবার স্বার্থেই বলব; কাউকে ছোট করে নয়। আমরা জাতিতে ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খীষ্টান হতে পারি; আমরা বর্ণে-গোত্রে-দলে আলাদা হতে পারি। কিন্তু সমাজ আমাদের একটাই; সেটা হচ্ছে- শিক সমাজ। এ সূত্রে আমরা একে-অপরের জাত ভাই। আমরা একই সূত্রে গাঁথা। কাজেই কারও মতামত কে তিরস্কার করে হাস্যরসে উড়িয়ে দেয়া আমাদের ঠিক হবে না। তাকে বিতর্কিত করা যাবেনা। এতে করে তার মনোবল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। উপরন্তু তাকে উৎসাহিত করে ঐ মতামতকেও আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করতে হবে।
আমরা সবাই বলছি- জাতীয়করণের দাবীটি একেবারেই যৌক্তিক। এটাই চরম সত্য কথা। আমরা বিভিন্ন যুক্তি, তথ্য, উপাত্ত, পরিসংখ্যান দিয়ে তার প্রমাণ দেয়ার চেষ্টাও করেছি। আমরা বার বার দেখিয়ে দিচ্ছি যে, জাতীয়করণ করা হলে এতদ্সংক্রান্ত কারণে সরকারী কোষাগারে কোনরুপ তিকর প্রভাব পড়বে না। কমতিও আসবেনা। বরং প্রাপ্তিযোগের সম্ভাবনা আছে। শিাবান্ধব সরকার নিশ্চয়ই এ বিষয়ে কৃপা দৃষ্টি দিয়েছেন এবং হয়ত বা (মনে মনে) একটা হিসাব-নিকাশও করে ফেলেছেন। পর্যায়ক্রমে বেসরকারী স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা জাতীয়করণের ঘোষণাও দিচ্ছেন। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে কেন জানি মনে হয়, সবার অজান্তে কোথায় যেন একটা অদৃশ্য শূণ্যতা আমাদের (আমরা যারা জাতীয়করণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি তাদের) মাঝে দেয়াল সৃষ্টি করেছে (?)! এই পরিবেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। নইলে গণতান্ত্রিক এ সরকার হঠাৎ করে আমাদের বেলায় মুখ ফিরিয়ে নেবেন কেন? এই অদৃশ্য শূণ্যতাকে বের করে তা পূরণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত।
ধারাবাহিকভাবে কাজ করলে সেই কাজটা বেশ গোছালো আর সুন্দর হয়। সবাই সেই কাজটার প্রশংসাও করে। কিন্তু আমাদের দাবীগুলোর বিষয়ে এই বিষয়টিকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি, এটাও ভাববার বিষয়। দাবীগুলো উপস্থাপনের কৌশল, যথাযথ কর্তৃপরে কাছে এগুলো সময়মত কিংবা আদৌ পৌঁচাচ্ছে কি-না, তাঁদের সাথে সার্বণিক যোগাযোগের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম স্থাপন (নিজেরা হলে তো সবচেয়ে উত্তম), মত-বিনিময় সহ অন্যান্য বিষয়গুলোর উপর আরও বেশি বেশি যতœবান হওয়া দরকার। বিজ্ঞমহল যারা নেতৃত্বের দায়িত্বে আছেন, তারা তো তাদের বাস্তবতার বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে বলবেনই। আমরা শুধু চলতি গাড়িটিকে একটু ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেবার চেষ্টা করছি মাত্র।
শুনে ভালো লাগলো যে, ৬৪ জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের শিকদের প্রাণের দাবি জাতীয়করণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। শধু তাই নয়, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে আমাদের ৫ অক্টোবরের শিক সমাবেশটি সফল করার চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে সমাবেশটিকে আরও প্রাণবস্ত ও ফলপ্রসু করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সমাবেশে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাই। উনি নিজে উপস্থিত থেকে আমাদের কষ্টের কথাগুলো জানুক। আমাদের বৈষম্যের কথাগুলো জানুক। আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাগুলোর কথা প্রধানমন্ত্রী মহোদয় অনুধাবন করুক। আমরা এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিকগণ দীর্ঘকাল ব্যাপী যে চরম বেতন বৈষম্য, বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, গ্রেডিং বৈষম্য, গৃহঋণ, বেতন, বদলী নন-এমপিও শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভূক্ত করণ সহ অসংখ্য বৈষম্য আর দাবী যে সব আমাদের ন্যায্য পাওনা, তা ধারাবাহিকভবে এক এক করে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিনয়ের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি তুলে ধরতে চাই।
আমরা যদি সঠিকভাবে আমাদের সমস্যাগুলো উপস্থাপন করতে পারি, আমার বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা, মানবতার মা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই মুজিব বর্ষের উপহার হিসেবে জাতীয়করণের ঘোষণা নিয়ে আমাদের দিকে দৃষ্টি ফেরাবেন।
পরিশেষে, ইউনেস্কোর প্রদত্ত ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্ব শিক দিবস শিা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালনের কথাটি বিবেচনায় এনে সরকারী শিাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিােেত্র বেসরকারী শিাপ্রতিষ্ঠান গুলোও যে অসামান্য অবদান রাখছে- তার ভারসাম্য রাকারী জাতীয়করণের স্বীকৃতি ইনশাল্লাহ্ আমরা পাব। এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
লেখক: শিক, কবি, কলামিস্ট।
সহকারী শিক
জাহাঙ্গীরাবাদ দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, পীরগঞ্জ, রংপুর।