শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: রংপুরের পীরগঞ্জের কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীায় জিপিএ ৩.৯ পেয়েছে আল্পনা। এমন ভালো ফল তার মুখে হাসি ফোটালেও তা যেন দুশ্চিন্তার মেঘে বারবার ঢাকা পড়ে যাচ্ছে তার ভবিষ্যতের আঁকা কিশোরী হৃদয়ের সকল আল্পনা। স্কুলের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে না সে। দরিদ্র পরিবারের পওে তার এ ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। বর্তমানে সে কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী। ৫নং মদনখালী ইউনিয়নের কাদিরাবাদ গ্রামের একটি টিনের ছাপরা ঘরে থাকে আল্পনার পরিবার। দিনমজুর মুকুল চৌহান ও গৃহিণী প্রতিমা রাণীর ছয় সদস্যের পরিবার। যে ঘরে মাথা গোঁজা যায় না, সেখানে বসেই মেধা ও ইচ্ছার জোরে আর কষ্ট উপো করে পড়ালেখা করে যাচ্ছে মেয়েটি। আল্পনার দুই ভাই দুই বোনসহ মোট চার ভাই-বোন। ভাইদের মধ্যে রতন ভ্যান চালায়। বড় বোন কল্পনার বিয়ে হয়ে গেছে। বড় কষ্টে দিন পার করছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। কথা হলো নাহিদার বাবার সাথে। তিনি অনেক কষ্ট আর হাহাকার নিয়ে তিনি বললেন- “আমি ডায়াবেটিক রোগী। আমার একটা থাকার ঘর নেই। মেয়ে আর মাকে ঝুপড়ি ঘরে রেখে আমাকে বারান্দায় থাকতে হয়। বড় মেয়ে কল্পনার বিয়ে হয়ে গেছে। আমি এই সময়ে বেশ অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার চিকিৎসার খরচ, মেয়ের (আল্পনা) লেখা-পড়ার খরচ আর দু মুঠো খাবারের ব্যবস্থাও আমার নেই। ইতোপূর্বে দু’বার ভিজিএফ কার্ড পেলেও এখন এই করোনাকালীন দু:সময়ে কেউ খোঁজ-খবরও রাখনা। আমার থাকার ঘর তো আপনারা দেখলেন। আমার একটা থাকার ঘর চাই। আর আল্পনার পড়া-লেখার খরচটাও যদি কেউ দিতে পারত, তাহলে মেয়েটা মানুষ হয়ে বড় চাকরী করতে পারত।“
আল্পনা মিষ্টি মেয়ে। নিষ্পাপ ফুলের মত ওর চেহারা। জল ছল-ছল নয়ন নিয়ে প্রথমে ও ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেই চায়নি। কিন্তু মা-বাবার বিশেষ অনুরোধ উপো করলনা সে। এক সময় সামনে এসে দাঁড়াল। নাম জিজ্ঞেস করলে মিষ্টি করে বিনয়ের সাথে জানিয়ে দিল। শোনালো ওর আশার কথা। “আমি লেখা-পড়া চালিয়ে যেতে পাই। আমার বাবার আর্থিক দৈনতা থাকলেও আমি অভাবের কাছে হেরে যেতে চাইনা। আমি লেখা-পড়া শিখে সকল দৈনতাকে জয় করতে চাই।“
আল্পনার মা প্রতিমা রাণী জানান- “ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি মেধাবী। সবার দোয়া ও সহযোগিতা পেলে একদিন নিশ্চয় সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। মুছে দিতে পারবে তার মা-বাবার চোখের পানি। যদি কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি আমার মেয়ের লেখাপড়ায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, মেয়েটি তার স্বপ্ন পূরণে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।“ শুধু তাই নন; মেয়েটির সাফল্যে এলাকাবাসী ও শিকরা অনেক খুশি। লড়াই অব্যাহত রাখতে পারলে সে একদিন কাঙ্তি ল্েয পৌঁছতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
স্বপ্ন পূরণের পথে লড়াই চালিয়ে যাওয়া আল্পনার কি সম্ভব হবে? নাকি অভাবের কাছেই কি নতি শিকার করতে হবে এমন স্বপ্নভরা একটি মেধাবী মুখকে?