মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৬ পূর্বাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার: আধুনিকতার ছোঁয়ায় কাষ্ঠ পাদুকা খড়ম এখন শুধুই স্মৃতি। কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে এ শিল্প। এককালে সমগ্র দেশের মানুষই ছিলো এর উপর নির্ভর। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাষ্ঠ পাদুকা। খড়ম এক প্রকার কাঠের পাদুকা। হিন্দি খড়ৌঙ শব্দ থেকে বাংলায় খড়ম শব্দুটির উৎপত্তি। সংস্কৃতিতে খড়ম পাদুকা নামে পরিচিত। হিন্দু ধর্মে খড়মের ব্যবহার সুপ্রচলিত তারা খড়মকে দেবতা ও শ্রদ্ধেয় সাধুসন্তদের পদচিহ্নের প্রতীকও মনে করেন। হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি জৈনধর্মেও ভিক্ষাজীবি সন্ন্যাসী ও সাধুসন্তেরা খড়ম ব্যবহার করে থাকেন। হিন্দু ধর্মের মহাকাব্য রামায়ণে খড়মের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিশিষ্ট আউলিয়া হযরত শাহজালাল (র:) ১৪শ শতকে বাংলাদেশের সিলেটে বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর ব্যবহৃত খড়ম এখনো তাঁর সমাধিস্থল সংলগ্ন স্থাপনায় রক্ষিত আছে। একখন্ড কাঠ পায়ের মাপে কেটে খড়ম তৈরি করা হয়। সম্মুখভাগে একটি বর্তলাকার কাঠের গুটি বসিয়ে দেয়া হয় যা পায়ের বৃদ্ধাঙ্গলি ও পাশের আঙ্গুলটি দিয়ে আঁকড়ে ধরা হয়। আর এটি উদ্ভাবন হয়েছিল মূলত মানুষের পা এর নিরাপত্তা বিধানের জন্যে, তবে এখন তা কেবল নিরাপত্তাই যোগায় না, বরং এটি সজ্জারও একটি অংশ। তাই এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না। জানা যায়, রেকসিন, প্লাষ্টিক, কাপড়, চামড়া ইত্যাদি দিয়ে তৈরি জুতা (পাদুকা) এখন মানুষের পায়ে শোভা বর্ধন করে। বিগত কয়েক বছর ধরে বার্মিস জুতায় ছেয়ে গেছে বাংলাদেশের নগর, মহানগর, শহর এমনকি গ্রাম বাংলাার মানুষের পায়ে পায়ে। বর্তমানে দেশের শতকরা ১০০ ভাগ মানুষই কাষ্ঠ পাদুকা খড়ম পরিহার করে বিভিন্ন নামী-দামী ও বাহারী ডিজাইনের জুতা (পাদুকা) ব্যবহার করছে। কথা হয় পীরগঞ্জ পৌরসভার আরাজী গঙ্গারামপুর গ্রামের প্রবীণ জনৈক মোকলেছার রহমানের সাথে তিনি জানান, ৭০ এর দশক পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল খড়ম। পরবর্তীতে যানবাহনের চাকায় ব্যবহৃত টায়ার জুতা। কালের আবর্তে টায়ার জুতাটিও বিলুপ্তি হয়ে যায়, আসে সেন্ডেল। বর্তমানে বাহারী মডেলের সেন্ডেলে বাজার সয়লাব। তিনি আরো জানান, এক জোড়া কাষ্ঠ পাদুকা খড়ম তৈরি করতে (মজুরি ও কাঠের দাম বাবদ) বর্তমান বাজারে খরচ পড়ে প্রায় ৩শ টাকা। পক্ষান্তরে সাধারণ এক জোড়া স্যান্ডেলের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু বর্তমান বাজারে। কেই পরেনা, দেখতেও বেমানান এবং দামও বেশিসহ নানা কারণে আর ব্যবহার করি না। তাই কাষ্ঠ পাদুকা জোড়া স্বযতেœ রেখে দিয়েছি, স্মৃতি স্বরুপ যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখতে পায়।