শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন
আব্দুল করিম সরকার: রংপুরের পীরগঞ্জে করোনা ও কঠোর লকডাউনের প্রভাবে গত ৪দিনের ব্যবধানে প্রতি লিটার দুধের দাম কমেছে ২৫ টাকা। দুধের পাইকারী ক্রেতাগণ পূর্বের মতো দুধ না ক্রয় করায় প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকার স্থলে এখন ২৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এমনকি খামারীগণ দুধ বিক্রি করে তাদের গরুগুলোকে প্রতিদিনের খাওয়ানোর টাকাও ঘুরে তুলতে পারছে না। ফলে উপজেলার ৪ শতাধিক খামারীর মাথায় হাত পড়েছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও ভুক্তভোগী খামারীদের সূত্রে জানা গেছে- পীরগঞ্জে দুধের গ্রাম বলে খ্যাত মিঠিপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়ে থাকে। বিগত ২০১০ সনে তৎকালীন উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদার রহমান সরকার মিঠিপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামকে দারিদ্রমুক্ত গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এরপর তিনি গ্রামবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে গরুর খামার করার জন্য উৎসাহিত করে। ফলে সে সময় কাশিমপুর গ্রামের দরিদ্র চাঁন মিয়া বিদেশী জাতের ১টি গরু ক্রয় করেন। এরপর গ্রামটিতে একের পর এক শুরু হয় দুধ উৎপাদনে খামার গড়ে তোলা শুরু হয়। বিষয়টি রংপুর অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি খামারীদের সাফল্য লক্ষ্য করার মতো হলে বিদেশী পর্যবেক্ষক দল ওই গ্রামেটিতে পরিদর্শনে আসেন। শুরু হয় প্রানী সম্পদ বিভাগের নিবিড় নজরদারী। এখন গ্রামটির প্রতিটি পরিবারে গরু প্রতি পালনের পাশাপাশি গরু খামার গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যে কারণে ওই কাশিমপুর গ্রামেই ২’শতাধিক গরুর খামার গড়ে উঠেছে। দুধ উৎপাদনে উপজেলার মধ্যে সেরা গ্রাম হিসেবে কাশিমপুর গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওইসব গরুর খামারে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকে। ওই গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহে ঢাকা থেকে আড়ং, ব্র্যাক, প্রান কোম্পানী, গ্রামীন শক্তি, বগুড়ার আলী দই ঘরসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন ট্রাক নিয়ে কাশিমপুরে দুধ কিনতে আসতো। করোনার প্রভাবে গত কয়েকদিন যাবত ওই পাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো না আসায় প্রতি দুধের লিটার ৪০টাকার স্থলে ২৫টাকায় নেমে এসেছে। অপরদিকে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ৪৫ থেকে ৫০টাকা লিটারে যে দুধ বিক্রি হচ্ছিলো সেই দুধ এখন ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার পাইকারী বাজারে দুধ অবিক্রিও থেকে যাচ্ছে। কাশিমপুর গ্রামের গরুর খামারী আব্দুুল কাদের মিয়া, চাঁন মিয়া, নুর আলম, আনিছার রহমান, বাদশা মিয়াসহ খামারীরা বলেন- করোনার মধ্যেও এতোদিন দুধ বিক্রি ভালই হচ্ছিলো। কিন্তু লকডাউন ঘোষনার কারণে উল্লেখিত পাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ কিনতে না আসায় দুধের বাজারে এই ধস নেমে এসেছে। তাদের গ্রামে স্থাপিত বিভিন্ন কোম্পানীর চিলিং সেন্টারগুলো এখন আর দুধ কিনছে না। ৩ থেকে ৪ দিন পর তারা সামান্য পরিমাণ দুধ ক্রয় করছে। খামারগুলো রক্ষায় সরকারী পদক্ষেপ জরুরী বলে খামারীরা দাবি করেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার ডা. তাজুল ইসলাম জানান করোনার কারণেই খামারীরা আর্থিক ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। তবে করোনা কেটে গেলে তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হবে।